গুগলের চাকরী ছেড়ে সমুচার দোকানদার !!!!

লাখ টাকা বেতনের চাকরী করেন আপনি, তাও বিশ্বের সেরা আইটি প্রতিষ্ঠানে। বিলাসবহুল জীবন, আছে নিরাপত্তা; কয়েক বছর চাকুরীতে লেগে থাকতে পারলেই উঁচু পোষ্ট আর কোটি টাকার হাতছানি…এসব ছেড়ে যদি আপনি সমুচা ব্যবসায় নামার কথা ভাবেন, সেই ভাবনাকে পাগুলে না বলার কারণ নেই কোনো। বরং আপনার নামের পাশে হদ্দবোকা, রামগাধা বা গরু-ছাগল টাইপের বিশেষণ যোগ করা না হলেই ব্যপারটা অস্বাভাবিক মনে হবে। এমন একটা কাজই করেছিলেন ভারতের মুনাফ কাপাডিয়া। টেক জায়ান্ট গুগলের আরামের চাকরী ছেড়ে যিনি শুরু করেছিলেন সমুচা বিক্রির ব্যবসা, তাঁর কোম্পানীর মুনাফা এখন বছরে পঞ্চাশ লক্ষ রূপীর বেশি!
গুগলের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকুরী পাওয়াটা আইটি’তে পড়া ছাত্র বা এক্সপার্টদের জন্যে স্বপ্ন। শুধু ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্যেই নয়, এই চাকরীতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যেমন আছে, তেমনই আছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাও। সেই চাকুরী ছেড়ে দিয়ে মুনাফ ফিরে এসেছিলেন নিজের দেশে, শুরু করেছিলেন সমুচা বিক্রি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বোহরী কিচেন এখন পুরো মুম্বাইজুড়েই সমাদৃত।
এমবিএ করার পরে বছরখানেক দেশে চাকুরী করলেন। এরপর ডাক এলো গুগল থেকে, মুনাফ উড়াল দিলেন আমেরিকায়। সেখানে কয়েকবছর লেগে রইলেন, কিন্ত সাহেবদের দেশে কেন যেন মন বসলো না ঠিক। এত অর্থ, চাকচিক্য ছাপিয়ে মুনাফের জিভ আনচান করে উঠতো মায়ের হাতের রান্না খাবারের জন্যে, মুনাফের মন পড়ে থাকতো বন্ধুদের আড্ডায়, ওদের সঙ্গে দোকানে বসে চা-সিঙ্গাড়া খাওয়ার সময়টাকে মিস করতে শুরু করলো খুব। অগত্যা বাক্স-পেটরা গুছিয়ে ঘরের ছেলে ফিরে এলো ঘরে।
দেশে ফিরে নিজেই কিছু করবেন ঠিক করলেন মুনাফ, কারো অধীনে চাকুরীতে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলেন না মুম্বাইয়ের এই তরুণ। কি করা যায়? উত্তরটা শুনুন তাঁর মুখেই-

“আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞেস করেন যে, তোমার হাতে তো বেশ কিছু টাকা আছে, এই টাকা দিয়ে তুমি কি করতে চাও? নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে তার জবাব হবে সে একটা রেস্টুরেন্ট খুলতে চায় এই টাকায়। আমাদের মুম্বাইতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাটা খুব জনপ্রিয়, একদম ছোট পরিসর থেকেও শুরু করা যায়, নিজের ঘর থেকেও খাবারের ব্যবসা করায় কোন অসুবিধা নেই। তাই আমিও সেই পথেই হাঁটলাম…।”

মুনাফের মা নাফীসার অবসর সময় কাটতো টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে। নিজেও রান্না করতে খুব পছন্দ করতেন তিনি। মায়ের পরামর্শ নিলেন মুনাফ, মায়ের হাতে রান্না করা খাবার দিয়েই তাঁর ফুডচেইনের শুরুটা হলো। মুম্বাই শহরে পুরো ভারত থেকেই মানুষজন আসেন চাকুরী করতে, বা অন্য কাজের সন্ধানে। নিজের বাড়ীর খাবারকে মিস করেন অনেকেই, সেখান থেকেই আইডিয়া নিয়ে নিজের এই ব্যবসার একটা ট্যাগলাইন ঠিক করে ফেললেন মুনাফ- “ঘর কা খানা” বা “ঘরের খাবার”। জন্ম নিলো মুনাফের নিজের রেস্টুরেন্ট- ‘দ্য বোহরী কিচেন।’

বোহরী কিচেনের সমুচা মন জয় করে নিলো সবার। বিখ্যাত তারকা থেকে ফাইভ স্টার হোটেলের কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত অনেকেই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন মুনাফের এই সমুচাটিকে। অন্যান্য আইটেমের মধ্যে নার্গিস কাবাব বা ডাব্বা গোস্তের মতো সুস্বাদু খাবারও আছে, সেগুলোও পছন্দ করেছেন ভোক্তারা। এরপর মা-ছেলে মিলে চালু করেছেন রেগুলার স্যাটারডে লাঞ্চ সেট মেন্যু, যেটি পাওয়া যাচ্ছে সাতশো রূপীতে। সাতশো থেকে এক হাজার রূপী পর্যন্ত বেশ ক’টি সেট মেন্যু আছে এখন বোহরী কিচেনে। দুপুর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত মুনাফের রেস্টুরেন্টের সামনে লেগে থাকে ভোজনরসিকদের লাইন। এক বছরের কিছু বেশী বয়েসী এই রেস্টুরেন্টটা প্রথম বছরেই মুনাফা হিসেবে নিজেদের পকেটে পুরেছে পঞ্চাশ লক্ষ রূপীরও বেশী! মুনাফের ইচ্ছে আছে কয়েক বছরের মধ্যে এই অঙ্কটাকে পাঁচ কোটিতে নিয়ে যাবার। সেটা মুনাফ নিশ্চয়ই পারবেন। ভাগ্য তো সবসময় সাহসীদের পক্ষেই থাকে।

spot_img
পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেড লাইসেন্স করবেন কি ভাবে ??
পরবর্তী নিবন্ধকোটা আন্দোলনকারীদের হেনস্থা করছে ঢাবি প্রশাসন: ছাত্র ইউনিয়ন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে