আধুনিক আইন ও ইসলাম

পশ্চিমা বলয়ে গড়ে উঠা আধুনিক সভ্যতার সাথে আমাদের দ্বন্ধ শুধু “যুদ্ধ ও শান্তির” (war and terror) সাম্প্রতিক প্রকল্প নিয়ে নয়। বরং তাদের সাথে আমাদের দ্বন্ধের পেছনে শক্তিশালী বিষয় হলো পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃৃত বনী আদমের জীবন ব্যবস্থার দর্শন নিয়ে। এই জাহিলী সভ্যতার দাবি হলো; এই কাজটা খোদ মানুষের। মানুষ নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে কি করলে সে সুখ পায়, তার চাহিদার পরিতৃপ্তি পুরণ হয়। মানুষের ভালো-মন্দ, নীতি নৈতিকতা, আইন ও ইবাদাত, সামাজিক সম্পর্ক, পরিবার ও রাস্ট্র, লেনদেন ও ব্যবসা বাণিজ্য এসবের ভালোমন্দ বিষয়ে মানুষেরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। মানুষেরা যাচাই বাচাই করবে, আলোচনা পর্যালোচনা করবে এবং সিন্ধান্ত নেবে যে, তারা কার ইবাদাত করবে। ধর্মের আরোপিত নীতি তাদের কাছে প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়।

অর্থাৎ জীবন ব্যবস্থা বলতে আমরা যা বুঝি তা গ্রহণ এবং প্রণয়নে মানুষ পুরোপুরি স্বাধীন এবং তারা এ বিষয়ে পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে। মানুষের জীবন ব্যবস্থা প্রণয়নে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলো- আধুনিক সভ্যতার জনপ্রিয় দর্শন। তারা এই দর্শনকে বলে “ডেমোক্রেসি”। এর বাইরের দিক হলো; মানুষকে ব্যক্তি অধিকার প্রশ্নে বিপ্লবী করে তোলা। এর ভেতরের দিক হলো; মানুষের এই বিপ্লবী অধিকার স্পৃহাকে আল্লাহর আরোপিত জীবন ব্যবস্থা ও আইনের বিপরীতে দাঁড় করানো এবং প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইখতিয়ারকে প্রমোট করা।

তাদের বক্তব্য হলো মানুষ তথা কথিত আল্লাহর ঠিক করে দেয়া বিধিবিধান মানতে বাধ্য নয়। ওহীর নির্দেশ বা ধর্মগ্রন্থগুলো বড়জোর মহা মনিষীদের কিছু ভাল কথার মর্যাদা পেতে পারে। যা স্কুল কলেজের দেয়ালে লেখা থাকবে আর পথচারী পথ চলতে বা বাসের জানালা দিয়ে পড়তে পড়তে কিছু সময়ের জন্য বিমোহিত হবে। কিন্তু মানুষ কী পালন করবে আর কী করবে না এই ক্ষেত্রে সে পুরোপুরি স্বাধীন। ধর্মগ্রন্থের কোন কথা তার ভাল লাগলে সে গ্রহণ করবে, আর ভাল না লাগলে সে বর্জন করবে এটাই তার মানবীয় অধিকার। এখানে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। কারো নির্ধারণ করে দেয়া জীবন ব্যবস্থাই তার কাছে চুড়ান্ত কল্যাণের মাপকাঠি নয়। বরং চূড়ান্ত কল্যাণের মাপকাঠি হলো তার নিজের সিদ্ধান্ত।

ফলে আধুনিক সভ্যতায় মানুষের ইচ্ছার বাইরে নৈতিকতার কোন মানদন্ড নেই। শুধু এই ইচ্ছার স্বাধীনতার জোরে আধুনিক সভ্যতা এমনসব বর্বরতাকেও নৈতিকতার সার্টিফিকেট দিতে পারে, যার অনৈতিকতার ব্যাপারে শুধু ধর্ম নয় অতীতের কোন জাতিও কখনো মতবিরোধ করেনি। কোন অনৈতিক কর্মের বহুল প্রচারের ফলে সেখানে যে বিপর্যয় দেখা দেয়, সে বিপযর্য় থেকে বাঁচতে তারা যে পদ্ধতীর আশ্রয় নেয় তা এ জন্য নয় যে, সেটা অনৈতিক বরং আপাতত তারা এর ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় বের করতে চায়।

বিবাহ, ধর্ষন, লিভটুগেদার, সমকামিতা, উভকামিতা, পষুকামিতা, ইনসেস্ট বিষয়ে তাদের রাস্ট্রীয় নীতিগুলো শতভাগ মানবীয় “ডেমোক্রেসি” দর্শনের অনুকুলে প্রণিত হয়। ফলে অবাধ যৌনতার ফলে মরণব্যাধি এইডস থেকে বাঁচতে তারা প্রয়োজনে পাবলিক টয়লেটে ‘কনডম’ বুথ চালু করবে। তারপরো এ অনৈতিক কাজটিকে রাস্ট্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ করবে না। কারণ তারা মনে করে মানুষের প্রাপ্ত চাহিদা ও অধিকারের বিপরীতে নৈতিকতার বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক। সবচে মজার ব্যাপার হলো রাষ্ট্র এখানে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নেয়। ব্যাক্তিকে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে বাচাঁতে রাস্ট্র তার খোদায়ী উপস্থিতি জানান দেয়। সরাসরি রাস্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠে অধিকার আদায় সংস্থা, সেবা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার জাল ।
যদিও শেষ বেলায় আক্রান্ত ব্যাক্তির দুচোখ বলতে পারে- এসব অধিকার, চিকিৎসা ও সেবা সবই ছিলো নিজেদের জন্য তৈরি নিজেদের প্রহসন মাত্র।

কিন্তু আল্লাহর দেয়া দ্বীন এই চিন্তার পুরোপুরি বিপরীত। দ্বীনুল ইসলাম মনে করে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। মানব জাতি তার সৃষ্টিগত দাস। দাসের কাজ হলো তার প্রভুর ইবাদাত করা। তার আরোপিত জীবন ব্যবস্থার কাছে পূর্ণ ইয়াকিন ও গভীর শ্রদ্ধাভরে আত্মসমর্পন করা। মালিকের দাসত্বের ভেতর মুক্তির পথ খোজা। তার দেয়া আদেশ নিষেধের আলোকেই আপন চাহিদা নির্মাণ করা। দ্বীনে ইসলামে মানুষ কি পালন করবে কি করবে না এসব প্রশ্নের সমাধান এই নয় যে, সে নিজেই এর সিদ্ধান্ত নেবে। বরং ইসলাম মনে করে মানুষ তার জীবন পরিচালনায় আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং তাঁর প্রেরিত রেসালাতকে সংশয়মুক্ত হয়ে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে নেবে।

মুহাম্মদ আফসার ।

spot_img
পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এ বি ডি ভিলিয়ার্সের অবসর
পরবর্তী নিবন্ধ‘স্টাইলিশ প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ’ জিতলেন সাকিব আল হাসান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে