বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে নবদম্পতিকে নিয়ে গাড়িটি ফিরছিল আশুলিয়ায় কনের বাড়িতে। ওই গাড়ির পেছনেই ছিল একটি বাসে তাদের স্বজনরা।
সোমবার বিকাল প্রায় সোয়া ৪টা। রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে একটি প্রাইভেট কারের (গাড়ি) ওপর। নিমিষেই চ্যাপ্টা হলো গাড়িটি। ভেতরে ছিল সাতজন।
স্থানীয়দের নিয়ে স্বজনরা বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও প্রায় ১৫০ টনের গার্ডার একচুলও নড়াতে পারেননি। তবে নবদম্পতিকে তাৎক্ষণিকভাবে বের করে আনা হয়। তখন উপস্থিত সবাই বুঝে গেল গাড়ির ভেতরের থাকা বাকি পাঁচজনের জীবনপ্রদীপ হয়তো নিভে গেছে।
তাই হলো।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর যখন উদ্ধার করা হলো, তখন পাওয়া গেল তাদের নিথর দেহ। ততক্ষণে স্বজনদের আহাজারিতে ঘটনাস্থলের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। কিন্তু এতো সময় পরও গাড়ি থেকে মরদেহগুলো বের করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ভেতরে যদি কেউ বেঁচে থেকেও থাকেন তাহলে এতোক্ষণে মারা গেছেন।
রিয়ামনির নানা বৃদ্ধ রাশেদুল হক বাচ্চু কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, প্রাইভেট কারে নবদম্পতি এবং দুই শিশুসহ সাতজন রওয়ানা দিলেও দুই পরিবারের ৮-১০ জন সদস্য বাসে করে রওয়ানা দিয়েছিলেন। প্রাইভেট কারটি ছিল সামনে। আর বাসের যাত্রীরা ছিলেন পেছনে। বাসে থাকা যাত্রীরা আরও বলেন, হঠাৎ আমার ছেলে ফোন করে। বলেন, রিয়ামনিদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। আমরা দ্রুত বাস থেকে নেমে প্রাইভেট কারের উদ্দেশে রওয়ানা দিই। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমাদের কিছুই করার ছিল না। দেখছিলাম, প্রাইভেট কার থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। কয়েকজন ধরাধরি করে দুজনকে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে। গাড়ির ভেতরে কয়েকজন আটকা পড়ে। কিন্তু তাদের বের করা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে। তাদেরও কিছু করার নেই। আর উৎসুক জনতা ছিল ছবি তোলা আর ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত।
দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার কারণেই এমন নিষ্ঠুর, নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটল-তাৎক্ষণিকভাবে এই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের প্রশ্ন-এর দায় নেবে কে?
উল্লেখ্য, এর আগেও (১৫ জুলাই) গাজীপুরে এই বিআরটি প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হয়েছিলেন।
