চ্যাটজিপিটি ভাষা শিখছে অনেক দ্রুত এবং সে একটা বই থেকে না, হাজার বই থেকে শিখছে, আবার ভুলে যাওয়ার বিষয়টা তার ধাতে নেই। তাহলে কত দ্রুত সে একটা ভাষা শিখতে পারে? সে খুব দ্রুত শিখতে পারছে, সন্দেহ নেই। হয়তো কয়েক মিনিটে বা কয়েক ঘণ্টায়।
যে অনেকগুলো ভাষা জানে, কথোপকথন করতে পারে, তাকে আসলে কী বলা যায়? তার তথ্যভান্ডার আবার যেকোনো মানুষের চেয়েও সমৃদ্ধ! ভাষাই মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। এখন একটি যন্ত্র সেই ভাষা শিখে গেছে! তা-ও শুধু একটি ভাষা নয়, অনেকগুলো ভাষা!
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কতগুলো ভাষা জানতেন? জানা যায়, তিনি ২৭টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং ৪০টি ভাষা সম্পর্কে তাঁর পড়াশোনা ছিল।
চ্যাটজিপিটি কতগুলো ভাষা জানে? এর সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া ভার। ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে পাওয়া গেল, ৯৫টি বা তার বেশিও জানতে পারে। চ্যাটজিপিটি একটা প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার। কাজেই যে কোম্পানি এটা তৈরি করেছে, ওপেন এআই, তারা সবকিছু জানাতে বাধ্য নয়। অনেক গোপনীয়তা রয়েছে। যেন তাদের যে প্রতিপক্ষ, তারা মূল সূত্র পেয়ে গিয়ে তাদের টপকে যেতে না পারে।
শেষে ভাবলাম, চ্যাটজিপিটিকেই জিজ্ঞেস করি। সে বলল, সে ৩১টিরও বেশি ভাষা জানে। সাবধানবাণী হিসেবে লিখল, সব ভাষায় সে সমান পারদর্শী নয়। এগুলো সে শিখছে ইন্টারনেটের অগাধ টেক্সট থেকে। সেটা ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করার ফলে বলেছিল। বাংলায় জিজ্ঞেস করলেও একই উত্তর তবে একটু ভিন্ন।
প্রশ্ন: তুমি কতগুলো ভাষা জানো?
চ্যাটজিপিটি: ‘আমি বিভিন্ন ভাষায় সাহায্য করতে পারি এবং বুঝতে পারি নিম্নলিখিত ভাষাগুলোয়—ইংরেজি, স্পেনীয়, ফরাসি, জার্মান, ইতালীয়, পর্তুগিজ, ডাচ, রুশ, চীনা (সরলীকৃত এবং পারম্পরিক), জাপানি, কোরিয়ান, আরবি, হিন্দি, বাংলা, ইন্দোনেশীয়, তুর্কি, পোলিশ, সুইডিশ, নরওয়েজীয়, ডেনিশ, ফিনিশ, গ্রিক, হিব্রু, হাঙ্গেরিয়ান, চেক, রোমানিয়ান, থাই, ভিয়েতনামি, ইউক্রেনীয়, মালয় ও ফিলিপিনো।
দয়া করে মনে রাখবেন, যখনই নতুন ভাষায় প্রশ্ন করবেন আমাকে, আমি পর্যাপ্ত স্বল্প ধারণা অথবা সম্পূর্ণ ধারণা রাখতে পারি, যেমন আমার ইংরেজি বিষয়টি সম্পর্কে।’
না, চ্যাটজিপিটি যে ভাষাগুলো জানে, সে ভাষায় যে সে পুরোপুরি দক্ষ, তা-ও নয়। এমনকি তার বাংলাটাও ইংরেজির মতো পোক্ত হয়নি। তার আবির্ভাব ঘটল মোটে তো কয়েক মাস। এখনো অনেক বাকি।
ওহ, আরেকটি মজার বিষয়, তার দেওয়া ভাষার তালিকায় বাংলা আছে, উর্দু এখনো নেই।
সে কীভাবে কাজ করছে, একটু দেখা যাক। প্রথমত, সে শিখছে। এটা একটা নিউরাল নেটওয়ার্কভিত্তিক সফটওয়্যার। তাকে একটা ভাষার অনেক বাক্য দিলে (টেক্সট) সে সেগুলো বিশ্লেষণ করে এর ব্যাকরণ এবং এর গঠনশৈলী বের করে ফেলতে পারে। তারপর সে নিজেও সেই ভাষায় বাক্য লিখতে পারে। ‘ট্রান্সফরমার’ টেকনোলজির কারণে, যেটা চ্যাটজিপিটির গোপন রহস্য, সে দ্রুত নিজের বাক্যগুলো শুদ্ধ করতে পারে। ঠিক যেভাবে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা নতুন একটা ভাষা শেখে, চ্যাটজিপিটির ক্ষেত্রেও তা–ই।
চ্যাটজিপিটি ভাষা শিখছে অনেক দ্রুত এবং সে একটা বই থেকে না, হাজার বই থেকে শিখছে, আবার ভুলে যাওয়ার বিষয়টা তার ধাতে নেই। তাহলে কত দ্রুত সে একটা ভাষা শিখতে পারে? সে খুব দ্রুত শিখতে পারছে, সন্দেহ নেই। হয়তো কয়েক মিনিটে বা কয়েক ঘণ্টায়। সে নিজে কি বলছে দেখুন, ‘As an AI language model, I don’t learn languages in the same way humans do. I don’t have the ability to acquire language skills through study, practice, or immersion over time. My language capabilities are a result of being trained on a large dataset of text from the internet।’
এর বাংলা আবার তাকেই করতে বললাম, সে করে দিল এ রকম। ‘আমি একটি এইচসিএলএম (AI) ভাষা মডেল হিসেবে কাজ করছি। আমি মানুষের মতো ভাষা শিখি না। আমার মধ্যে অধ্যয়ন, অনুশীলন বা সময়ের মাধ্যমে ভাষাদক্ষতা অর্জনের ক্ষমতা নেই। আমার ভাষাদক্ষতা ইন্টারনেটের বিশাল একটি পাঠ্যগত তথ্য সেটের ফলাফল হিসেবে প্রশিক্ষিত হওয়ার ফল।’
না, এটাও বাংলায় সুন্দর করে বোঝাতে পারেনি। তবে যতটুকু শিখেছে, তাতেই তো মাথা ঘুরে ওঠার মতো অবস্থা।
অন্য চ্যাটবট থেকে সে অনেক এগিয়ে গেছে, তার কারণ হিসেবে অনেকেই ভাবছেন, এটা হলো ‘প্রি-ট্রেইন্ড’। অর্থাৎ তাকে প্রথমেই ছেড়ে দেওয়া হয়নি, যে মানুষ প্রশ্ন করবে, নানান কথা বলবে, ইন্টারনেট এ তথ্য–উপাত্ত তো আছেই, তুমি ঠেকে ঠেকে ভাষাটা নিজেই শেখো। কিছু রক্ত-মাংসের প্রশিক্ষক দিয়ে তাকে প্রথমে ভাষার আদলটা শেখানো হয়েছে। ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই নাকি অনেক বেশি সফলভাবে সে কাজ করতে পারছে।
যেভাবে এগোচ্ছে, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন চ্যাটজিপিটি বাংলার সব আঞ্চলিক ভাষাও শিখে যাবে। চাটগাঁইয়া, সিলেটি, রংপুরের ভাষা, বরিশাল, ময়মনসিংহ—কিছুই বাদ থাকবে না। শুধু সেই আঞ্চলিক ভাষাগুলোয় অনেক বাক্য লিখে তার ভেতরে ঢোকাতে হবে।
তারপর আপনি চাটগাঁর হলে আপনার সামনে এসে (যদি একটি রোবটের সঙ্গে তাকে জুড়ে দেওয়া যায়) সে কুশল জিজ্ঞেস করবে এভাবে, ‘গম আছো ন?’
ভাবা যায়!