নদ-নদীর পানি বাড়ছে, উত্তরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা

বন্যা

ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে তিস্তা নদীর পানি আজ বৃহস্পতিবার স্বল্প সময়ের জন্য বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত কমতে থাকায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পথে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া গতকাল বুধবার এ তথ্য জানান।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিন সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সামান্য পরিবর্তন হতে পারে আগামী ৪৮ ঘণ্টার আবহাওয়া। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় আজ বজ্রসহ মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

একই সঙ্গে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, ‘ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তিস্তা নদীর পানি স্বল্প সময়ের জন্য ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি বা তীব্র মানের বন্যার আশঙ্কা নেই।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতির পথে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাত কমে আসায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্য পরিস্থিতি উন্নতির পথে। এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি গতকাল বুধবার বিপত্সীমার নিচে অবস্থান করছিল। পানি দ্রুত বৃদ্ধির প্রবণতা এখন আর নেই। সুরমা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে।’

পাউবোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিভিন্ন সময় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

পাউবো আরো জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা ব্যতীত সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

যমুনার পানি বাড়ছে

বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও বাড়ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে এবং চরাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ৬৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিত কুমার সরকার জানান, উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। আরো দুই-তিন দিন নদীতে পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিস্তা পারে বন্যার আশঙ্কা

এদিকে সিকিমের পাহাড়ি অঞ্চলে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে বিপত্সীমার মধ্যে ওঠানামা করছে নদীর পানি। এমতাবস্থায় লালমনিরহাট, নীলফামারীসহ তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কায় দিন পার করছে বাসিন্দারা। তিস্তাপারের বাসিন্দারা বলছে, তিস্তার পানি কখনো বাড়ছে আবার কখনো কমছে। ফলে হঠাৎ করেই উজান থেকে আসা ঢলে নদীর পানি উপচে বন্যা দেখা দিতে পারে নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ‘প্রবেশদ্বার’ হিসেবে পরিচিত ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগের দিন মঙ্গলবার একই সময় নদীটির পানি বিপত্সীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টায় পানি কমে বিপত্সীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

spot_img
পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের কাছে বিধ্বস্ত পাকিস্তান, সুনীল ছেত্রীর হ্যাটট্রিক
পরবর্তী নিবন্ধআজ ফুরিয়ে যাবে অক্সিজেন টাইটানের, ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মরিয়া তল্লাশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে