কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থান সংকটে ছাপরা তুলে চলছে পাঠদান। অথচ বিদ্যালয়ের জমিতে গাছ লাগিয়ে বেড়া দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জমি স্থানীয় এক ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে রাখায় নতুন ভবনটি নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ দখলের প্রতিবাদে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের নামে এক জায়গায় ১২, আরেক জায়গায় ৬ শতক জমি আছে। বিদ্যালয়ের জমি জোরপূর্বক দখল করে বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়ে দখলে নেওয়া হচ্ছে। আর ওই জমির ওপর তিনর একটি পাকা ঘর ও দুই কক্ষের একটি পাকা ভবন ছিল।
নতুন ভবন করার উদ্দেশ্যে পুরান ভবন ভাঙার পর বিদ্যালয়ের জায়গাটা দখলে নেয় মাহফুজ নামে একপক্ষ। ভবনের পাশেই নতুন ভবন নির্মাণের জায়গা আছে। কিন্তু যেখানে নতুন ভবন করা সম্ভব, সেখানে খাড়াতাইয়া গ্রামের মাহফুজুর রহমান নামে একটি পক্ষ অবৈধভাবে দখল করে টিনের বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়ে ঘিরে রেখেছেন। এতে স্থান সংকটে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনের জায়গায় গাছ লাগিয়ে টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে বিদ্যালয় মাঠে। অস্থায়ী অন্যের জায়গায় টিনের চালায় বসে অতিকষ্টে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা।
টিনের চালায় বেড়া দেওয়া ঘরে বসে ক্লাস করা শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী লিপি আক্তার বলে, একচালা টিনের নিচে বসে লেখাপড়া করতে কষ্ট হয়। অনেক গরম লাগে ও ভয় লাগে।
প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ১৮ শতক জমি অবৈধভাবে দখল করে রাখায় জায়গার সংকটে নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। কক্ষ সংকটে শিশু ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা চালায় ক্লাস করাতে হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’
উপজেলা প্রকৌশলী আলিফ আহাম্মেদ অক্ষর বলেন, ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ভবন ভাঙার পর একটি পক্ষ মাহফুজুর রহমানের নিজের জায়গা বলে দখল করে নিয়েছেন এবং আদালতে মামলা করেছেন। বিদ্যালয়ের জায়গায় গাছ লাগিয়ে টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের জমি ঘিরে রাখা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমার জমিতে আমি বেড়া দিয়ে রেখেছি । আপনার সমস্যা কী? ঘর তুলতে চাইলে আমার জমির দাম দিয়ে দিক।’
উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে খাড়াতাইয়া পূর্বপাড়া গ্রামে বিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১২ শিক্ষার্থীর জন্য ১২ শতক জমির ওপর নির্মিত একটি পুরাতন ভবনে তিনটি কক্ষ ছিল। ভবনটি নতুন করার জন্য পুরান ভবন ভাঙার পর দখলে চলে যায়।
প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষ সংকট তীব্র হওয়ায় শিশু ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অন্যের জায়গায় বিদ্যালয় টিনের চালা তুলে পাঠদান করাতে হয়।
উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মডেল একটি নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা রওশন আরা বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। গ্রামের লোকদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে বলেছি।’
বুড়িচং উপজেলার ইউএনও হালিমা খাতুন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ জনক ব্যাপার। এই বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। একটি পক্ষ মাদ্রাসা আরেক পক্ষ স্কুল দুই পক্ষের একটি পক্ষ নিজের জায়গা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহকারে দেখব। এবং নতুন ভবন করার ব্যবস্থা নেব।
