আর্জেন্টিনার বাহন স্বর্গীয় সেই বাঁ পা

স্বর্গীয় সেই বাঁ পায়ে আবারও উদ্ধার পেল আর্জেন্টিনা। কততম বার, মনে করতে পারেন?বাঁ পা নিয়ে এমন কাব্যও কত পড়েছেন, তা মনে করাও তো কঠিনই হওয়ার কথা। সেই বাঁ পা কখনো ডিয়েগো ম্যারাডোনার, কখনোবা লিওনেল মেসির। গত পরশু লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে দুজন আরও বেশি মিলেমিশে একাকার। মেসির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বিখ্যাত পূর্বসূরির সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর নাম। এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে রুদ্ধশ্বাস রাতে আক্ষরিক অর্থেই মিলে গেলেন দুজন। বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলায়, বিশ্বকাপে গোল করায়।লুসাইল স্টেডিয়ামে এদিন ৮৮ হাজার ৯৬৬ জন দর্শক। ১৯৯৪ সালের ফাইনালের পর বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে মেক্সিকানও কম ছিলেন না। তবে তাঁরা ছিলেন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে। আর্জেন্টাইনরা যেখানে দল বেঁধে। গ্যালারিতে ছোপ ছোপ সবুজ তাই হারিয়ে যাচ্ছিল আকাশি–নীলে।সেই আকাশি–নীলকে উদ্বাহু নৃত্যে মাতিয়ে মেসির শটটা যখন মেক্সিকোর জালে; আর্জেন্টিনার এই দলের আরেক লিওনেল, কোচ লিওনেল স্কালোনি বেঞ্চে বসে কান্না চাপার চেষ্টা করছেন। মেসির শৈশবের নায়ক পাওলো আইমার তার প্রয়োজন মনে করলেন না। তিনি কাঁদতে শুরু করলেন।ম্যাচের পরে স্কালোনি জানাবেন, তখন তিনি কী ভাবছিলেন, ‌‘ওই মুহূর্তে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ ওকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছে।‌’ বাকি অর্ধেক কেন চায়নি, সেটাই তো বিস্ময়ের। মেসির গোলে আর্জেন্টিনা জেতে, কিন্তু সেটাই কি মেসিকে নিয়ে শেষ কথা! বল পায়ে মেসিদের জাদু তো আসলে ফুটবলকেই আরও সুন্দর করে তোলে। এই কথাটাই কাল দুপুরে খুব সুন্দর করে বললেন একজন। এক ফুটবলার। জেনে একটু অবাকই হতে পারেন, ওই ফুটবলার ব্রাজিল দলে খেলেন।কাল দুপুরে ব্রাজিলের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে কোচ তিতের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ডিফেন্ডার মার্কিনিওস। মেসি-রোনালদোর মতো গ্রেট দুই খেলোয়াড় শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন, এ নিয়ে কি কিছু বলবেন? সংবাদ সম্মেলন পরদিন সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে। এর সঙ্গে সম্পর্কহীন এই প্রশ্নে মার্কিনিওস বিরক্ত হতেই পারেন। তা তো হলেনই না, বরং শুরুতেই প্রশ্ন করা সাংবাদিককে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‌‘খুব সুন্দর প্রশ্ন।‌’এরপর যা বললেন, তা রীতিমতো মুগ্ধ হওয়ার মতো, ‘মেসি শুধু আর্জেন্টিনার নন, রোনালদোও শুধু পর্তুগালের নন। ওদের পাওয়া ফুটবলেরই সৌভাগ্য। এমন খেলোয়াড়েরা নির্দিষ্ট কোনো দেশের সীমায় আটকে থাকেন না।‌‌’ ওই দুজনের সঙ্গে নেইমারের নামটাও যোগ করে দিয়ে বললেন, ‌‘ওরা একেকজন মহামূল্য রত্নের মতো‌।‌’লিওনেল মেসি নামে সেই রত্নের মূল্য আর্জেন্টাইনরাই অনেক দিন বুঝতে চাননি। মেসির অনেক লড়াইয়ের মধ্যে দেশের মানুষের মন জয় করাও তাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ক্লাবের জার্সিতে কেন ভালো খেলেন, আর্জেন্টিনার জার্সিতে কেন নয়—এই প্রশ্নে কান ঝালাপালা হয়েছে। আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত মুখস্থ আছে কি নেই, এমন আলোচনাতেও। লিওনেল মেসির চেয়ে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেই বেশি ভালোবেসেছে আর্জেন্টাইনরা। এখনো হয়তো তা–ই বাসে। তবে এই বিশ্বকাপে এসে মনে হচ্ছে, আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে স্থান পেতে মেসির আকুতির আর দরকার নেই। আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে তাঁর অক্ষয় আসন পাতা হয়ে গেছে।সেটা কি এই বিশ্বকাপে এসেই হয়েছে? অবশ্যই না। তবে প্রমাণটা ভালোভাবে পাওয়া যাচ্ছে এখানেই। এর আগের বিশ্বকাপগুলোতে আর্জেন্টিনার ম্যাচে সমর্থকদের হাতের পতাকা-ব্যানারে মেসিও থাকতেন, তবে ম্যারাডোনা এগিয়ে থাকতেন বিপুল ব্যবধানে। এবার আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা রীতিমতো মেসিময়, ম্যারাডোনা শুধু উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। কেউ কেউ অবশ্য দুজনের ছবি পাশাপাশি বসিয়ে দিয়েছেন। শুধু এভাবেই না থেকে সত্যিকার অর্থেই ম্যারাডোনার পাশে স্থান পেতে কী করতে হবে, মেসির তা অজানা নয়।

spot_img
পূর্ববর্তী নিবন্ধকানাডাকে বিদায় করে টিকে রইল ক্রোয়েশিয়া
পরবর্তী নিবন্ধ৩২ বছর পর সালমানের সঙ্গে অভিনয় করবেন সেই দক্ষিণি অভিনেত্রী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে