দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত ডেন্টাল চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল (৪০)।
রবিবার ভোর ৫টার দিকে শেওড়াপাড়ায় তার বাসার কাছে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, বুলবুল নিজের কাজে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য ভোরে বাসা থেকে বের হন। তখনই তিনি হামলার শিকার হন।
রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে সেঞ্চুরি আর্কেডে ‘রংপুর ডেন্টাল’ নামে ডা. বুলবুলের একটি চেম্বার রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ঠিকাদারি ব্যবসাও করতেন। তিনি স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রেখে গেছেন।
বুলবুলের মৃত্যুতে হতবাক হয়েছেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিক, মানতে পারছেন না বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে বুলবুলের চেম্বার রয়েছে। ঢাকার অনেক গণমাধ্যমকর্মী বুলবুলের কাছে চিকিৎসা নিতেন। তাঁর এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে কর্মরত মানিক মুনতাসীর এই মৃত্যুতে হতভম্ব হয়ে লিখেছেন, ‘আমি জাস্ট হতভম্ব। ডা. বুলবুল আর নেই। এ শহর আপনাকে-আমাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। শুধুই ট্যাক্স দিয়ে যান। ফিরতি নিশ্চিত মৃত্যু। আজ ভোরে শেওড়াপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারীরা কেড়ে নিয়েছে আমার ভাই, আত্মার আত্মীয়। বুলবুলকে। আমি জাস্ট হতভম্ব, ক্ষুব্ধ। ’
মনোজ দে নামের একজন লিখেছেন, সকালটা বিষণ্ণ হয়ে গেল বুলবুল ভাইয়ের খুনের সংবাদে। বুলবুল ভাই আমাদের বন্ধু, আমার মতো অনেক বামপন্থী বন্ধুর ডেন্টিস্ট। ছিন্নমূল ও পথশিশুদের বিনা মূল্যে দাঁতের চিকিৎসা দিতেন। রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন চিন্তার এই মানুষটার সঙ্গে কত তর্ক-বিতর্ক করেছি, কিন্তু কোনো দিন মতবিরোধ হয়নি। হাসিমুখে চা খেতে খেতে বিদায় নিয়েছি। কোনো দিন বাসের ভাড়া না থাকলে জোর করে পকেটে টাকা গুঁজেও দিয়েছে। আজ ভোরে ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হয়েছেন। পথে পড়ে ছিল তার রক্তাক্ত লাশ। এটা ছিনতাই নাকি হত্যা সেটা নিয়ে এখনো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভেঙে পড়েছে তারই লক্ষণ। বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা হবে না এটাই সত্য। যারা এই নৈরাজ্যকে টিকিয়ে রেখেছে তাদের কাছে বিচার চেয়ে লাভ কী? বুলবুল ভাই, বিদায়। আপনার হাসিমুখ আর কোনো দিন দেখা হবে না। ’
মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিজুর রহমান বলেন, ‘শেওড়াপাড়া মেট্রো রেলস্টেশনের কাছে দুর্বৃত্তরা ডাক্তার বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে। তার ঊরুতে আঘাত করার কারণে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। ডাক্তার বুলবুলের কাছে ১২ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা হলে টাকা, মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার কথা। আবার বাধাগ্রস্ত হলেও অনেক সময় ছিনতাইকারীরা টাকা-পয়সা না নিয়ে পালিয়ে যায়। তাই ঘটনাটি ছিনতাইকারী ঘটিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।




















