বগুড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা ল্যান্স কর্পোরাল জাকির হোসেন হত্যার ঘটনায় দুই নারীসহ প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরা শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন।
রোববার এদের বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগে গ্রেফতার দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যায় জড়িত তারা দুজন ছাড়া আরও ছয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন। র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপারে যাচাই চলছে।
গ্রেফতার চারজন হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুরের গন্ডগ্রামের আবুল খায়েরের মেয়ে সোমা আকতার লিয়া (২৫), একই উপজেলার লতিফপুরের মৃত লয়া মন্ডলের ছেলে তাইজুল ইসলাম (২৮), নন্দীগ্রামের রণবাঘার আবদুর রউফের মেয়ে রোফা আকতার রোপা (২০) ও গাবতলীর কালাইহাটা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৩২)।
র্যাব-১২ বগুড়া সূত্র জানায়, শনিবার রাতে শহরের কলোনি এলাকার চিটাগাং আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে লিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শেরপুর থেকে তাইজুল ইসলাম, মাঝিড়া থেকে রোপা ও মাদলা ব্রিজ এলাকা থেকে আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, রোপা প্রেমের ফাঁদে ফেলে সাবেক সেনা সদস্য জাকির হোসেনকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কৈগাড়ী এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে লিয়া আগে থেকে ছিলেন। পরে তাইজুল, রাজ্জাকসহ ৬/৭ জন বাড়িতে ঢুকে অসামাজিক কাজের অভিযোগে জাকিরকে জিম্মি করেন। তার কাছে নগদ দুই হাজার ৩০০ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে আরও ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
সন্ধ্যার দিকে সুযোগ বুঝে জাকির হোসেন ওই বাড়ি থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন আশরাফুল ইসলাম আশা নামে এক প্রতারক ধাওয়া করে জাকিরের পিঠে ছুরিকাঘাত করেন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যান। রাত সাড়ে ৭টার জাকিরকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার রাতেই জেলা পুলিশ শাজাহানপুর উপজেলার কৈগাড়ী পূর্বপাড়ার মৃত মিলনের ছেলে একটি অস্ত্র মামলার আসামি আশরাফুল ইসলাম আশা (২৪) ও একই এলাকার শহিদুল ইসলাম খোকনের ছেলে মোস্তফা কামাল কমলকে (২৫) গ্রেফতার করে। তাদের কাছে হত্যায় ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু পাওয়া যায়। এরা দুজন শনিবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আদালতে আশা ও কমল সাবেক সেনা সদস্য জাকিরকে হত্যার দায় স্বীকার এবং এর কারণ উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তারা জানিয়েছেন, দুই নারীর সহযোগিতায় তারা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাড়িতে এনে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। তাদের নগ্ন ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করা হতো। এ হত্যাকাণ্ডে মোট আটজন অংশ নেয়। আর আশা নিজে ভিকটিমের পিঠে ছুরিকাঘাত করেন।
তিনি আরও জানান, র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার চারজনের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।




















