সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পলিথিন ও পাটখড়ির আদলে আবদ্ধ

মাদারীপুর সদর উপজেলা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পলিথিন ও পাটখড়ির আদলে আবদ্ধ। ইটবালু খুঁটির ওপর লোহার সঙ্গে থাকা টিন মরিচা ধরে খসে পড়ায় ঘর থেকেই আকাশ দেখা যায়। কোনোমতে পাটখড়ি ও পলিথিনের জোড়াতালি দিয়ে থাকছেন বসবাসকারীর। ব্যারাকগুলো দ্রুত মেরামত করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের লোকজনেরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ।

সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চরগোবিন্দপুর এলাকায় রাস্তার পাশে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে ৪০টি পরিবার। সংস্কারের অভাবে এ ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে বৃষ্টির দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় বাসিন্দাদের। ফলে পরিত্যক্ত ঘরেই জমেছে মাদক এবং জুয়ার আড্ডা। আতঙ্কে দিন কাটছে বসবাসকারী পরিবারগুলোর।

জানা যায়, ২০০৭ সালে সরকার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামে  রাস্তার পূর্ব পাশের পাড় ঘেঁষে দুস্থ ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে। যেখানে ভূমিহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও অসহায় পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। কিন্তু বর্তমানে এ ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাকা মেঝে ভেঙে গেছে। টিনের চালা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। লোহার অন্য সরঞ্জামেও মরিচা ধরেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ফুটো চাল চুইয়েপানি পড়ে। ঘরের বেড়া ও দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ভাঙাচোরা ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে কোনো রকম বসবাস করে আসছেন বাসিন্দারা। রাতে বৃষ্টি হলে মাথায় পলিথিন দিয়ে ভাঙাঘরের কোনে বসে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। গোসলখানা, টয়লেট ও টিউবওয়েলগুলো ভেঙে গেছে। নেই চিকিৎসা ও বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা। অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ও অস্বাস্থ্যকর এ ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করছে এসব পরিবার। অভাব এদের নিত্যসঙ্গী।

প্রকল্পে কবরস্থান, খেলার মাঠ, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ ১০টি টিনের ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে রয়েছে ৮০টি করে কক্ষ। আবাসিক জমিসহ প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পে জন্য ১২টি শৌচাগার ও চারটি গোসলখানা করা হয়েছিল।

সরেজমিন গিয়ে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আটটি টিউবওয়েলের মধ্যে এখন একটি সচল আছে। ১২টি শৌচাগারের মধ্যে কোনোটিই ব্যবহারের উপযোগী নেই । নামাজের স্থানসহ নেই চলাচল করার তেমন রাস্তা। যখন সরকার ঘরগুলো দিয়েছে, তখন পরিপূর্ণ ছিল লোকজনের বসবাস। বর্তমানে ৮০ পরিবারের মধ্যে ৪০ পরিবার জরাজীর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। কেউ কেউ স্থানীয়দের অত্যাচারে চলে গেছে। আবার কেউবা ঘরের অবস্থা খারাপ দেখে অন্যত্র চলে গেছে। এখন রাত হলেই শুরু হয় পরিত্যক্ত ঘরের ভেতরে মাদক সেবন ও জুয়া খেলার আড্ডা। কিছু বললেই সরকারি ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে  বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটি সমবায় সমিতির ঘর দেওয়া হয়েছিল তা স্থানীয়রা কৃষি মালামাল রাখত। এ সমবায় সমিতিতে ভূমিহীন ও অসহায় পরিবারের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করত। তাদের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়ালেখা করায় স্থানীয়দের কৃষিপণ্য রাখতে অসুবিধার কারণে এ সমবায় সমিতির ঘরটি আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। তার পর থেকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৮-৯ কিলোমিটার দূরে। শিশুরা দূরে না যেতে পারায় এখানেই চালু হয়েছিল একটি শিক্ষা কার্যক্রম। এ ঘরের লোকেরা দাবি করে সরকার যেন তাদের এই সমবায় সমিতির ঘরটি তাড়াতাড়ি মেরামত করে দেয়। তা হলে তাদের ছেলেমেয়েরা এখানে লেখাপড়া করতে পারবে।

৫৬ বছরের বিধবা হাজেরা বিবি জানান, তার ঘরখানা বসবাসের উপযোগী নয়। তার পরও অন্য উপায় না থাকায় এখানে থাকতে হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের টাকা-পয়সা, চাল-ডাল কিছুই চাই না; শুধু চাই এ ঘরগুলো মেরামত করে দিক।

রেনু রানী রিশি জানান, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু নির্বাচনের সময় আসে। আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের কাছে গেলে আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। ‘বাড়ি বাড়ি কাজ করি। শুধু ঈদের সময় চাল পাইছি। কষ্টে আছি, যা বোঝাতে পারব না।’

খোয়াজপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, আমরা ইউএনও স্যার ও ডিসি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ঘরগুলো মেরামতের জন্য। আর্থিক সাহায্যের কথা জানতে চাইলে বলেন, তাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

খোয়াজপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মোল্লা জানান, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে ইউএনও এবং ডিসি স্যারকে অবগত করেছি। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন বরাদ্দ হলে ঘরগুলো মেরামত করে দেবে। কিন্তু এখনো বরাদ্দ হয়নি।

spot_img
পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রদলের গঠনতন্ত্র হয়নি ৪৩ বছরেও
পরবর্তী নিবন্ধযশের জন্মদিনে ‘প্রেমিককে’ ভালোবাসার বার্তা দিয়েছেন নায়িকা নুসরাত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে