ম্যারাডোনা-মেসির রূপকথার গল্প

লা মাঞ্চার দন কিহোতোর কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে! মনে না থাকলে আরেকবার মনে করিয়ে দিই, লা মাঞ্চার স্প্যানিশ যুবক দন কিহোতো বীরত্বের খোঁজে একদিন নেমেছিলেন পথে। কিন্তু সবই যে মরীচিকা। সঙ্গী সানচো পানশাকে নিয়ে বৃথা চেষ্টা করে গেলেন শুধু। অপ্রাপ্তি নিয়ে একদিন ভুল স্বীকার করে দন কিহোতো মরেও গেলেন। দন কিহোতোর মৃত্যু থেকে আধুনিক কথা সাহিত্যের যাত্রা শুরু। সম্ভবত আধুনিক মানুষেরও।আধুনিক মানুষ মানেই যন্ত্রণা ও অস্তিত্বের সংকটের এক নিরবচ্ছিন্ন লড়াই। প্রতিমুহূর্তে একেকটি যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা। সেই যুদ্ধকে ভুলে থাকতে মানুষগুলো যেসব বিষয়কে আঁকড়ে ধরল, তার একটি ফুটবল। বিশ্বকাপ যার শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য।সেই সুন্দরের পেট চিড়ে একদিন বের হয়ে এসেছিলেন একজন ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও তারপর লিওনেল মেসি। দন কিহোতো ও সানচো পানশা যেমন আধুনিক সাহিত্য ও মানুষের মিথ। তেমন ভবিষ্যতের সেই মিথের জন্ম হবে ডিয়েগো ও তাঁর প্রিয় লিওর ভেতর থেকে। ডিয়েগো অবশ্য এখনই মিথ, আর মেসি বাস্তবতা। তবে বাস্তবতা ও মিথের যে দূরত্ব, গতকাল রাতে সেটা ঘুচিয়ে দিয়েছেন মেসি। ম্যারাডোনার কাঁধে মাথা রেখে গল্পের যে জাদুকর পথে নেমেছিলেন, তিনি যেন কাল যুদ্ধ জিতে ফিরে এলেন নিজের ঘরে।ম্যারাডোনার অবশ্য আলাদা করে রাজা হওয়ার শখ ছিল না। তিনি জন্মেছিলেন রাজা হয়ে। তিনি মূলত চেয়েছিলেন নেপলসে দরিদ্র শিশুদের আদর্শ হতে। বুয়েনস এইরেসের ধুলো পায়ে জড়িয়ে শাসন করেছিলেন ফুটবল–দুনিয়াকে। যার সবকিছু ছিল মানবীয়। শুধু ওই বাঁ পা ছাড়া। সেটা সম্ভবত কোনো এক ঘুম–ঘুম রাতে চুরি করে এনেছিলেন ফুটবল–ঈশ্বরের কাছ থেকে। সেই পা দিয়ে ফুটবল ইতিহাস এফোঁড়–ওফোঁড় করে ৩৬ বছর আগে জিতেছিলেন বিশ্বকাপ। পরে সেই পা—টি রোজারিওর এক ছোট্ট ছেলেকে দিয়েও দিয়েছিলেন। কে জানে, রূপকথার গল্পের মতো ফুটবল–ঈশ্বরও হয়তো অভিশাপ দিয়ে বলেছিলেন, ‘ডিয়েগো বেঁচে থাকতে এই পা আর বিশ্বকাপ জিতবে না।’ জেতেওনি।

spot_img
পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজের চেষ্টায় এত দূর
পরবর্তী নিবন্ধমেট্রোরেলের চাকরির লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে